১০০ দিনের প্রকল্প কেন বন্ধ? এই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট জনাইয়েছে,
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, ‘দুর্নীতির তদন্তে এখনও পর্যন্ত যে টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়েছে, সেটা কীভাবে ব্যবহার করা হবে?’ তা জানাতে হবে কেন্দ্রকে। দুর্নীতি যাতে প্রতিরোধ করা যায় তার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে , তাও জানাতে হবে কেন্দ্রকে’। আগামী ১৫ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার মধ্যেই কেন্দ্রকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে বলে নির্দেশ উচ্চ আদালতের। ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধের অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক বার সুর চড়িয়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় এ নিয়ে সরব হয়েছেন একাধিক বার। এ বার এই টাকা বন্ধের কারণ কেন্দ্রের কাছে জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। ১০০ দিনের কাজের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, কেন রাজ্যে এমনটা হচ্ছে, হস্তক্ষেপ করুক হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। কেন্দ্রের কাছে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর বক্তব্য, গোটা বিষয়টায় একটা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে কোনও সংস্থার প্রাথমিক যে কাজ থাকে, সেটা রাজ্যের সংস্থা হতে পারে, তারা বিষয়টার অনুসন্ধান করতে পারে। তা করার পরে তারা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু, এই ধরনের প্রকল্পের কাজ অনন্তকাল বন্ধ করে রাখা যায় না। এই মর্মে মত ব্যক্ত করেছেন প্রধান বিচারপতি। কেন্দ্রের কাছে উত্তর চেয়েছেন, অবিলম্বে এই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে আরম্ভ করার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব, সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি কেন্দ্রের কাছে চেয়েছেন। প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই একটি কেন্দ্রীয় টিম গঠন করা হয়েছিল, সেই টিম প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের চারটি জেলার ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করেছে এবং বলেছে, এই জেলাগুলির ক্ষেত্রে যে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল, সেগুলির ক্ষেত্রে কী কী করা সম্ভব। ইতিমধ্যেই দুর্নীতির বেশ কিছু টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই চারটি জেলাকে বাদ দিয়ে, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় এই প্রকল্প কবে কীভাবে শুরু করা যায়, সেই প্রশ্নের উত্তর কেন্দ্রের কাছে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এর পাশাপাশি যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে সেই টাকা কীভাবে ব্যবহার করা সম্ভব সেই প্রশ্নের উত্তরও তিনি কেন্দ্রের কাছে চেয়েছেন। সবমিলিয়ে, এরাজ্যের তরফে বারবার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, ১০০ দিনের প্রকল্পের কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না বা কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে, সেটা নিয়ে আজ প্রধান বিচারপতির যে প্রশ্ন এবং পর্যবেক্ষণ এবং কেন্দ্রের কাছে যে উত্তর চেয়েছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে গত ২০ মার্চ নোডাল অফিসার কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানান, হাইকোর্ট নিযুক্ত চার সদস্যের কমিটি বিভিন্ন সময় রাজ্যের চার জেলা পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদা এবং দার্জিলিং জিটিএ এরিয়া পরিদর্শন করে। ১০০ দিনের কাজের টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। এই অর্থ প্রকৃত প্রাপকদের দ্রুত বণ্টনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী আদালতে জানান, মোট ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে গোলমাল হয়েছে। তার মধ্যে ২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার মতো পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে এবং তা রাজ্যই উদ্ধার করেছে। এ দিন আদালত জানায়, কেন ১০০ দিনের প্রকল্প বন্ধ, আগামী ১৫ মের-মধ্যে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে রিপোর্ট দিয়ে তা আদালতকে জানাতে হবে।