তৃণমূলেরই তিন সাংসদকে নিশানা কল্যাণের

IMG-20250408-WA0266

প্রকাশ্যে তৃণমূলের কোন্দল।সামনে এল সাংসদ-সংঘাত। তৃণমূলেরই তিন সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সাংসদদের মধ্যে কোন্দল চলছে বলে বিজেপি-র আইটি সেলে প্রধান অমিত মালবীয় সোশ্য়াল মিডিয়ায় কিছু ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। তারপরেই মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে দলেরই তিন সাংসদের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি নাম করেছেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায় এবং বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজ়াদকে কড়া ভাষায় নিশানা করেন লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক।তবে নাম না করে তৃণমূলের এক মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।যদিও তাঁর ইঙ্গিত কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের দিকেই বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কয়েকদিন আগে দিল্লির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, স্মারকলিপিতে প্রতিনিধিদের সইয়ের জায়গায় ওই মহিলা সাংসদের নাম ছিল না। অথচ তাঁকে কমিশনে যেতে বলা হয়েছিল। যা নিয়ে তিনি তীব্র আপত্তি তোলেন। ওই মহিলা সাংসদের বক্তব্য ছিল, তিনি অন্য সাংসদ প্রতিনিধিদের কাছে জানতে পেরেছিলেন, তাঁদের দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই স্মারকলিপিতে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সই করানো না হলেও তাঁকে শুক্রবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কমিশনে যেতে বলা হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে তখনকার মতো ওই মহিলা সাংসদকে বলা হয়, তাঁর নামটি স্মারকলিপিতে হাতে লিখে দেওয়া হচ্ছে। কল্যাণের ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, ওই মহিলা সাংসদ ঘটনাপরম্পরা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করছিলেন। তাতেই মেজাজ হারান কল্যাণ। কমিশনের দফতরের বাইরে ফুটপাথের উপরেই তিনি ওই মহিলা সাংসদকে লক্ষ্য করে অপশব্দ প্রয়োগ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের বক্তব্য। তখনই ওই মহিলা সাংসদ সেখানে কর্তব্যরত বিএসএফ এবং সিআইএসএফ জওয়ানদের বলেন, তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তাঁরা যেন কল্যাণকে গ্রেফতার করেন। আর তা নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কল্যাণ।  মহিলা সাংসদ সম্পর্কে কল্যাণ বলেন, “কোনও অবদান নেই। ২০০৯ সালের পর এসেছে। কংগ্রেসের কোনও বড় নেতার বান্ধবী বলেই তো জেলার রাজনীতিতে ঢুকে গিয়েছিল? এদের সব ব্যাকগ্রাউন্ড এমন। আমি কেন মানব, স্বভাবতই অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। আমার মতো লোককে জেলে ঢোকাতে বলছে! বলছে অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছি। এটা মিথ্যে কথা সম্পূর্ণ। ভিডিওটা আমাদেরই একজন সাংসদ, যে বাইরে থেকে এসেছে, সেই বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। এর একটা ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। ঠিক আগের দিন কীর্তি আজাদ কয়েক জন মহিলা সাংসদ, দু’চার জন পুরুষ সাংসদের চিঠি নিয়েছিল। স্পিকারের উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, চিত্তরঞ্জন পার্কের সন্দেশের দোকানের কাউন্টার খোলা হোক সংসদে। আমি জেনেছি, বিরোধিতা করেছি। দলের অনুমতি ছাড়া কে দোকান খুলবে! তৃণমূল বেসরকারি ব্যবসাতে আগ্রহী নয়। আমাকে বলা হয়, প্রাইভেট ম্যাটার! তৃণমূলের প্রতীকে সাংসদ হয়েছে। সাংসদদের সই সংগ্রহ করছে। প্রাইভেট ম্যাটার হল কী করে? চিঠি জমা দিতে পারেনি। আমার উপর রাগ হয়েছে।” কল্যাণ আরও বলেন, ‘’২০১১ সালের পরে এসে রাজনীতি করার লোক নই। দল যেদিন বলবে সব ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। কিন্তু এসব অসভ্য় মহিলা সাংসদদের সহ্য করব না। দিদি একবার বলুক, আমি এখনই পদত্যাগ করে চলে যাব। মহিলা বলে এই নয়, সুন্দরী মহিলা বলে এই নয়, ফট ফট করে ইংরেজি বলতে পারে বলে যে কোনও পুরুষকে অসম্মান করতে পারে না। সবকিছু সীমা আছে।” তাঁর কথায়, “সংসদের ভিতর লড়াইটা আমি করি। আর কেউ করে না। আর কার গলার আওয়াজ শোনা যায়। একটা সেশনে যাব না, দেখে নেবে কী পারফর্ম্যান্স তৃণমূলের। শুধু মুর্দাবাদ, মুর্দাবাদ বললে হয় না।” এদিন সৌগত রায়কেও নিশানা করেন কল্যাণ। তাঁর বক্তব্য, “দলের ভাবমূর্তি অনেক কারণে নষ্ট হয়। সৌগত রায়ের জন্যও তো নষ্ট হয়েছে। নারদ কাণ্ডে টাকা খাওয়ার জন্য নষ্ট হয়নি। কাল একটা ভিডিও এসেছে, মিটিংয়ে বসে সিগারেট খাচ্ছে। তার জন্য ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি? অনেক হয়েছে। ২০১৭-‘১৮ সালে যখন চোর চোর বলতো, পালিয়ে যেতে হতো তো! আমাকে বসে শুনতে হয়েছে। সৌগত রায়রাই ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। মহিলা সাংসদের জন্য যাঁদের বড্ড দরদ, তাঁরা ঠিক করছেন তো! দিদি বলে দিন, আমি চলে যাব। কিন্তু ওই মহিলাকে আমি সহ্য করব না। ১৮-২০ মিনিট বলতে হবে। সব চাপ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু ওই সাংসদের চাপ সহ্য করব না। অনেকের হিংসে হয়েছে জনপ্রিয়তা দেখে, দিদি আমাকে ওয়াকফ বিল নিয়ে কথা বলতে মনোনীত করেছেন। আমি কী করব? সৌগত রায় সেদিনই বলেছেন, ‘ওর খুব অন্যায়। সৌগত রায়ের কোনও ক্যারেক্টার আছে না কি? এখানে এক কথা, ওখানে আর এক কথা বলেন। এর পিছনে লাগা, ওর পিছনে লাগাই কাজ। ২০০১ থেকে আমাকে পছন্দ করেনি। এরা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির লোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগালি দিলে গায়ে লাগে না, প্রিয়রঞ্জনকে গালাগালি দাও, সৌগত রায়ের গায়ে লাগবে। নারদার চোর, টাকা তো নিয়েছে! ওর জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। চোরগুলো সব সুন্দর একজায়গায় চলে এসেছে। কেউ উপহার নিচ্ছে, কেউ লন্ডন যাচ্ছে, কেউ নারদে টাকা খাচ্ছে। দু’নম্বরি লোকেদের এক জায়গায় আসতে বেশি সময় লাগে না’।” কেন মহিলা সাংসদের নাম নিচ্ছেন না, জানতে চাইলে কল্যাণ জানান, তিনি নেবেন না নাম। সকলেই জানেন তিনি কে। তাঁর কথায়, “ইন্টারন্যাশনালি ফেমাস না! আমরা তো গ্রামের, বড় জোর দিল্লি পর্যন্ত। লন্ডন-আমেরিকা গেলে তবে না বুঝবে!” তাঁর উপর সাংসদ কীর্তির পুরনো রাগ রয়েছে বলেও দাবি করেন কল্যাণ। কল্যাণের বক্তব্য, ‘‘উনি বাইরের রাজ্য থেকে এসে জিতেছেন তৃণমূলের সিম্বলে (প্রতীকে)। সই করাচ্ছেন দলের এমপিদের নিয়ে। আর বলছেন ব্যক্তিগত বিষয়? আমি বাধা দিয়েছিলাম বলেই রাগ। তাই ভিডিয়ো ছেড়ে দিয়েছে।’’

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement