উত্তর প্রদেশে বাড়ি ভাঙার নাম করে প্রায়ই ‘বুলডোজার শাসন’ দেখা যায়।এবার সেই বুলডোজার অ্যাকশান নিয়েই সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল যোগীর সরকার। প্রয়াগরাজে বাড়ি ভাঙার মামলায় মঙ্গলবার যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। বুলডোজ়ার অ্যাকশনকে ‘অমানবিক এবং বেআইনি’ বলেও উল্লেখ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। অভিযোগ, ২০২১ সালে গ্যাংস্টার নেতা অতিক আহমেদের সম্পত্তি লাগোয়া একাধিক বাড়ি ভেঙে দিয়েছিল প্রয়াগরাজ প্রশাসন। সেই ঘটনা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় যোগীর সরকারকে। ওই ঘটনায় প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তকে ১০ লক্ষ করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি এএস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূইঞার বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে কারও বাড়ি ভেঙে ফেলা হলে, তা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। বাসস্থানের অধিকার বিষয়ে আইনে যা বলা হয়েছে, সব সময় তার যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সব কিছুই মানা হয়নি। এতে সংবেদনশীলতার অভাবই স্পষ্ট হয়।’’২০২১ সালে নিহত গ্যাংস্টার আতিক আমেদের জমিতে নির্মিত হওয়ার অভিযোগে যে সমস্ত বাড়ি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার প্রত্যেকটির মালিককে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রয়াগরাজের পুর কর্তৃপক্ষকে।এই ধরনের মামলাগুলি ‘বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছে’ বলে উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রয়াগরাজ পুর কর্তৃপক্ষের তরফে নেওয়া বুলডোজ়ার অ্যাকশনের সিদ্ধান্তকেও ‘অমানবিক’ বলে তকমা দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।যে ভাবে ‘বেআইনি এবং অমানবিক’ পদ্ধতিতে উত্তরপ্রদেশ সরকার বাসস্থান গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলেই জানাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘বুলডোজ়ারের মাধ্যমে বাড়ি ভেঙে ফেলা কেবলমাত্র বেআইনিই নয়, গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার বিরোধীও। বাসস্থানের অধিকার বাঁচার অধিকারের সমান। অথচ বাসযোগ্য স্থান, বিল্ডিং, বহুতল পরের পর ধ্বংস করা হচ্ছে।’ প্রয়াগরাজের লুকেরগঞ্জ এলাকায় এক আইনজীবী, এক অধ্যাপক এবং এক মহিলার বাড়িতে বুলডোজ়ার অ্যাকশন চলায় তাঁদের প্রত্যেককে ১০ লক্ষ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিতর্কের সূত্রপাত প্রয়াগরাজ প্রশাসনের একটি পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে। সেখানকার একটি জমিতে চার-পাঁচ জনের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন এক জন আইনজীবী এবং অধ্যাপকও। অভিযোগ, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই তাঁদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। কেন তাঁদের বাড়ি ভাঙা হয়েছিল? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলদের বাড়ি যে জমিতে ছিল, প্রশাসন তা ভুল করে নিহত গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের বলে চিহ্নিত করেছিল। তার পরই ওই বাড়িগুলি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, বাড়ি ভাঙার কথা তাঁর মক্কেলদের জানানো হয় মাত্র এক দিন আগে। বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে ভুক্তভোগীরা প্রথমে ইলাহাবাদ হাই কোর্চের দ্বারস্থ হন। যদিও সেখানে তাঁদের আবেদন খারিজ হয়। তার পরই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি ভূঞার বেঞ্চ সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের সমালোচনা করে। প্রশ্ন তোলে, প্রশাসনের নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়েও। বিচারপতি ওকা বলেন, ‘‘বাড়ি ভাঙার ফলে মামলাকারীরা তাঁদের মাথার উপর ছাদ হারিয়েছেন। তাঁদের যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, কর্তৃপক্ষের উচিত সর্বদা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।’’ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যাঁদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাঁদের নোটিসের জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।’’ সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কোনও বাড়ি ভেঙে ফেলার আগে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সকল নাগরিকের বাসস্থানের অধিকারের কথা সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে।