আরজি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার।সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল আরজি করের নির্যাতিতার পরিবার। সোমবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে সেই মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে প্রশ্নের মুখে পড়ে সিবিআই। এদিনের শুনানিতে আদালত জানতে চায়, এটি কি ধর্ষণ নাকি গণধর্ষণের মামলা? গণধর্ষণ হয়ে থাকলে বাকি সন্দেহভাজন কারা? এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের তদন্ত ঠিক কোন জায়গায়, সেই ব্যাপারেও জানতে চায় আদালত।এর পাশাপাশি আগামী তিনদিনের মধ্যে সিবিআইয়ের কেস ডায়রি তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন শুনানিতে হাজির ছিলেন নির্যাতিতার মা ও বাবা। মামলাটির পরবর্তী শুনানি ২৮ মার্চ, শুক্রবার। এদিনের শুনানিতে বিচারপতি ঘোষ বলেন, ‘একজন সাজা পেয়েছে। কিন্তু এটা কি গণধর্ষণ, নাকি একজনই ঘটনা ঘটিয়েছে?’ আদালতের নির্দেশ, খুনে অভিযুক্ত এই একজনই কি না, তা স্পষ্ট করুক সিবিআই। তদন্ত শুরুর সময় কারা সন্দেহের তালিকায় ছিলেন? আর কোনও অভিযুক্ত কি আছে? কেস ডায়েরি জমা দিতে হবে পরের শুনানিতে।রিবারের দাবি, এই মামলায় ফের তদন্ত হোক হাইকোর্টের নজরদারিতে। দরকারে সিট গঠনও হোক।বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে সিবিআই জানায়, তদন্তকারী অফিসার রাজ্যের বাইরে আছেন। তাই কিছুটা সময় দেওয়া হোক। তারা সব প্রশ্নেরই জবাব দেবে। অন্য দিকে রাজ্যের তরফে এ দিন আদালতে বলা হয়, ‘বিচার হয়ে গিয়েছে। ফলে আইনে কি এই মুহূর্তে নতুন করে তদন্তের সুযোগ আছে? তেমনটা হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে আমরা আইনের যুক্তি আদালতের সামনে তুলে ধরছি।’ অন্য দিকে, সাজাপ্রাপ্ত সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী নতুন করে এই মামলায় তাকে যুক্ত করার আবেদন জানান। যদিও আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি। আদালতের বক্তব্য, যদি এমন কোনও নির্দেশ জারি হয়, যার জেরে তার ক্ষতি হতে পারে, তখন কোর্ট ভাববে।এ দিন সিবিআই দু’সপ্তাহ সময় চায় আদালতের কাছে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, আগামী শুনানিতে সিবিআইকে কেস ডায়রি-সহ তদন্তের অগ্রগতির তথ্য জানাতে হবে। ২৮ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি। আরজি কর কান্ড সামনে আসার পর তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। তদন্তে নেমে গ্রেফতার করে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার হাতে পায় সিবিআই। কিন্তু সিবিআইয়ের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে নির্যাতিতার পরিবার।সুপ্রিম কোর্টে মূল মামলা চলাকালীনই পুনর্তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল পরিবার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা চলায় উচ্চ আদালত সেই মামলা শুনতে চায়নি। সম্প্রতি অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট অনুমতি দেওয়ায় নতুন করে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানায় নির্যাতিতার পরিবার। সেই মামলাতেই সোমবার হাইকোর্টের প্রশ্নের মু্খে পড়ে সিবিআই। এদিনের শুনানিতে অভয়া পরিবারের তরফে আইনজীবী আবেদন জানান, পরবর্তী তদন্ত হোক আদালতের নজরদারিতে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিকদের দিয়ে সিট গঠন করা হোক। এই মামলায় নিরাপত্তারক্ষী এবং নার্সদের এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। হাসপাতালের সহকারী সুপারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তাই পরিবারের দাবি, স্ট্যাটাস রিপোর্ট চাওয়া হোক। পালটা রাজ্যের তরফে প্রশ্ন ওঠে, বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কি পরবর্তী পর্যায়ের তদন্ত করা যায়? বিশেষ আদালত কি এর অনুমতি দিতে পারে? বিশেষ আদালতে না গিয়ে পরিবার কেন হাই কোর্টে আবেদন জানাচ্ছেন, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। তবে রাজ্যের তরফে এও জানানো হয়েছে, পরবর্তী তদন্তের নির্দেশ আদালত দিলে এবং আইন যদি অনুমতি দেয় তাহলে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই।