বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ক্ষোভ এলাহাবাদ হাইকোর্টে

IMG-20250324-WA0261

বিচারপতি যশোবন্ত বর্মার বাংলো থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় দেশ।এবার সেই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে বদলি করা হল এলাহাবাদ হাই কোর্টে। সোমবার এই বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করল সুপ্রিম কোর্ট। হোলির রাতে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিতর্কে জড়ান বিচারপতি বর্মা। তাঁর দিল্লির সরকারি বাসভবন থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। সেই আবহেই তাঁর বদলির খবর মিলল। সোমবার দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করে এক প্রস্তাব জারি করে সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম। দিন কয়েক আগে তাঁর দিল্লির বাসভবন থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধারের অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতি এখনও পর্যন্ত এই নগদ উদ্ধারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে এই বিষয়ে তদন্ত চলছে।সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০ এবং ২৪ মার্চের বৈঠকে বিচারপতি বর্মাকে দিল্লি হাই কোর্ট থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। ২০ মার্চ কলেজিয়ামের সদস্য তথা বিচারপতি বর্মাকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। সোমবার কেন্দ্রের কাছে সেই সুপারিশ পাঠানো হয়। এদিকে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করার আর্জি নিয়ে এ বার মামলা দায়ের হল সুপ্রিম কোর্টে। সম্প্রতি বিচারপতি বর্মার বাসভবনে আগুন নেভানোর সময় দমকলকর্মীরা টাকার পাহাড় দেখতে পান। সেই ঘটনায় তিন হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ম্যাথিউজ নেদুমপারার দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় ওই কমিটি গঠনের নির্দেশকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে ।বিচারপতি বর্মার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দিল্লি হাই কোর্টের থেকে রিপোর্ট তলব করেছিল শীর্ষ আদালত। ওই রিপোর্ট ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়েছে এবং তা শীর্ষ আদালতের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। মামলাকারীর বক্তব্য, সাধারণ মানুষের মনে যে আস্থা কমতে শুরু করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টটি জনসমক্ষে নিয়ে আসার পরে সেই আস্থা আবার ফিরে এসেছে। এই অবস্থায় কেন বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মামলাকারী। অতীতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় রয়েছে, শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির আগাম অনুমতি ছাড়া কোনও হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা যাবে না। রায়ের ওই অংশটিকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন মামলাকারী।
বিচারপতি বর্মার বাসভবন সংক্রান্ত ঘটনায় এফআইআর রুজু না-করে তিন সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশকেও চ্যালেঞ্জ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। মামলাকারী তাঁর আবেদনে এই ঘটনাকে ‘জনস্বার্থের জন্য বিরাট ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। শীর্ষ আদালতের কলেজিয়াম দ্বারা গঠিত তিন সদস্যের কমিটিকে অনুসন্ধানের কোনও এক্তিয়ার নেই বলে মনে করছেন মামলাকারী। এই মর্মে সুপ্রিম কোর্ট যাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়, সেই আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।দোলের ছুটি চলাকালীন বিচারপতি বর্মার বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে নগদ পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিচারপতির সরকারি বাংলোয় আগুন লেগে গিয়েছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যেরাই দমকল ডেকেছিলেন। দমকলের কর্মীরা বাড়িতে ‘টাকার পাহাড়’ দেখতে পান বলে দাবি করা হচ্ছে। ওই সময়ে বিচারপতি বর্মা শহরে ছিলেন না। ওই ঘটনার জেরে বিতর্ক ছড়ায়। তা নিয়ে পদক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্টও। গঠিত হয়েছে তিন হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি। ওই কমিটিতে রয়েছেন পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শীল নাগু, হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জিএস সন্ধাওয়ালিয়া এবং কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতি অনু শিবরামন। এই বিতর্কের আবহে সোমবার বিচারপতি বর্মাকে বিচারের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।
যদিও গোটা বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে ব্যাখ্যা করেছেন বিচারপতি বর্মা। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি দিল্লিতে ছিলেন না। স্ত্রীর সঙ্গে ভোপালে গিয়েছিলেন। যে ঘর থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, সেটি তাঁর মূল বাসভবনের বাইরে বলেও দাবি করেছেন বিচারপতি বর্মা। তাঁর দাবি, ওই ঘরে বাইরের লোকজনও যাতায়াত করে থাকেন। কী ভাবে সেখানে এত টাকা এল, তা তিনিও জানেন না।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement