৪২ লক্ষ ভোটের ব্যবধান সামাল দেওয়া এখন বড় প্রশ্ন বিজেপির

IMG-20250705-WA0107

সংগঠনে ব্যাপক রদবদল হতে চলেছে বঙ্গ বিজেপিতে

২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচন। হাতে সময় বলতে কয়েকটা মাস। তার আগে রাজ্য বিজেপির নতুন দায়িত্ব নিলেন শমীক ভট্টাচার্য। বছর রাজ্য বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব নিয়েই শমীক ভট্টাচার্য জানান, বাংলার মানুষ তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। কিন্তু, ভোটের অঙ্ক বলছে তৃণমূলকে হারানো বিজেপির পক্ষে মুখের কথা নয়। কারণ, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে, এ রাজ্যে তৃণমূলের থেকে ৪২ লক্ষ ভোট কম পেয়েছে বিজেপি। অঙ্কের নিরিখে চব্বিশের লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২ কোটি ৭৫ লক্ষের সামান্য বেশি ভোট। আর বিজেপির ঝুলিতে ২ কোটি ৩৩ লক্ষের সামান্য বেশি ভোট। আর এখানেই প্রশ্ন, এই ফারাক মিটবে কী করে তা নিয়েই। আর এবার এই বিস্তর ব্যবধানকে কীভাবে নিজেদের কব্জায় আনা যায় তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে স্যাফ্রন ব্রিগেড। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শুক্রবার সল্টলেকে দলীয় কার্যালয়ে দলের মোর্চা ও সেলগুলির সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন শমীক। এ ব্যাপারে পরামর্শ, হিসাব-নিকাশ চাওয়া হল দলের বিভিন্ন মোর্চা এবং সেলগুলির দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকেও। বুথগুলির কী অবস্থা, তাও জানতে চাওয়া হয়। তবে বিজেপির মোর্চা ও সেলগুলির সক্রিয়তা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল ও মঙ্গল পাণ্ডে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বাংলায় বিজেপির সহ পর্যবেক্ষণ অমিত মালব্যও। এদিকে সূত্রে খবর, নির্বাচনের জন্য যে এখন থেকে ময়দানে ঝাঁপাতে হবে, মোর্চা ও সেলগুলিকে সেই বার্তা দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বৈঠকেই মোর্চা ও সেলগুলিকে আরও সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিলেন তিনি। কারণ, কয়েকমাস পর বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূলকে পিছনে ফেলতে সেখানে সক্রিয় হতেই হবে মোর্চা আর সেলগুলিকে।এর পাশাপাশি দলের নেতা কর্মীদের জিততে কী কী করণীয় তাঁর পাঠ পড়ালেন বিজেপির পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। কার্যত কড়া ভাষায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন কী করতে হবে। বিজেপির পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলের বক্তব্য, জেতা বুথে হারা যাবে না। নতুন সভাপতিকে পাশে বসিয়েই এই কড়া নির্দেশ। বনসলের মতে ২০০ বুথে জেতার লক্ষ্য নিয়ে এখনই নেবে পড়তে হবে।এই ২০০ বুথের হিসাব এই ভাবে , ২০২৪ লোকসভা জয়ী ৯২ বিধানসভায় এগিয়ে বিজেপি। আর ১০৮ কেন্দ্রে খুব কম ব্যবধানে পরাজয় বিজেপির। এই হিসাবে ২০০ আসনে সব চেয়ে বেশি জোর দিতে বলা হয়েছে। এই সব বিধান সভায় স্থানীয় ইস্যু , অপারেশন সিঁদুর, রাজ্য সরকারের দুর্নীতি , আইনশৃঙ্খলা, নারীদের সন্মান নিয়ে প্রচারে জোর দিতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি এই ২০০ টি বিধানসভায় সব বুথে অবশ্যই বুথ কমিটি তৈরি করতে হবে।২০২৬-এর ভোটে বড় ইস্যু হতে চলেছে অপারেশন সিঁদুর। কারণ মানুষের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে তার সঙ্গে। খুব স্বাভাবিকভাবে বিজেপির এই কর্মকাণ্ডে একটা বড় অংশের ভোটার তাদের দিকে ঝুঁকতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলায় এসএসসি দুর্নীতি অন্যতম ইস্যু। বিজেপি সেটিকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগবে।বর্তমানে কসবা ‘ল’ কলেজের কাণ্ডে নারী নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। কাজেই এটাও বিজেপির কাছে বড় হাতিয়ার। এই সমস্ত ইস্যুগুলি নিয়েই শাসক দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে গেরুয়া শিবির।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দুবার বাংলা থেকে ঘুরে গেছেন। ফের ১৮ জুলাই রাজ্যে আসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বারাসত, বনগাঁ, ব্যারাকপুর, কলকাতা উত্তর- এর চার জেলাকে নিয়ে জনসভা করার কথা তাঁর। ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস। তাঁর আগেই বঙ্গে মোদির আগমন কী বার্তা দেবে সেটাই এখন দেখার। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসার আগেই বিজেপির নেতা কর্মীকে কড়া নির্দেশ দেন বনসল। শমীক ভট্টাচার্য নতুন রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর ব্যতিক্রমী ভাষণে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সংগঠনে ব্যাপক রদবদল হতে চলেছে। উগ্র হিন্দুত্বের লাইন থেকেও সরে আসছে বিজেপি। বরং ‘সবকা সাথ’ বার্তা দিয়েছিলেন শমীক। এই গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল, শমীকের হাতে দায়িত্ব যাওয়ার ফলে এবার সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে দিলীপ ঘোষ গোষ্ঠী। এনিয়ে এবার মুখ খুললেন শমীক ভট্টাচার্য। বললেন, ”দিলীপ ঘোষকে যেখানে কাজে লাগানোর সেখানেই লাগানো হবে। ইতিমধ্যে ৬, মুরলীধর সেন লেনের দলীয় কার্যালয়ের ভোলবদল করে ফেলেছেন রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। শনিবার কার্যালয় থেকে সমস্ত নেতার ছবি সরিয়ে বড় করে লাগানো হয়েছে দলের প্রতীক পদ্মের ছবি। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ছবিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কারণ, তিনি মনে করেন যে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। এবার রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকে নিয়েও মুখ খুললেন বর্তমান শমীক ভট্টাচার্য। দিন দুই আগে শমীকের শপথ অনুষ্ঠানে ব্রাত্য ছিলেন দিলীপ ঘোষ। ওইদিন দলের কারও মুখে তাঁর নামটুকুও শোনা যায়নি। ফলে এই জল্পনা আরও উসকে উঠেছিল যে তবে কি দল আর দিলীপকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না? শনিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন শমীক। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বুঝিয়ে দিলেন। তাঁর কথায়, ”দিলীপ ঘোষ কোথাও যাননি। উনি কোথাও যাবেনও না। দিলীপ ঘোষ কোনও সেলেবেল কমোডিটি নয়। দল ঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। দিলীপ ঘোষকে যেখানে কাজে লাগানোর, সেখানেই লাগানো হবে। দিলীপ ঘোষ ছিলেন, আছেন, থাকবেন।” বর্তমান রাজ্য সভাপতির এহেন মন্তব্যে আরও স্পষ্ট হল, গেরুয়া সংগঠনের আদি নেতৃত্বকেই ফের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement