প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে প্রতিবেশী অঞ্চলে ভারতের উন্নয়নমূলক উদ্যোগ

IMG-20250408-WA0224

নয়া দিল্লী: প্রধানমন্ত্রী মোদী বিদ্যমান ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মাহো-ওমানথাই রেলপথের ট্র্যাক আপগ্রেডেশন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন। তিনি মাহো-অনুরাধাপুরা অংশে একটি উন্নত সিগন্যালিং এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত সিগন্যালিং প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন। এই প্রকল্পগুলি গত দশবছরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশগুলিতে ভারতের দেওয়া প্রকল্প এবং সহায়তার দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত হবে, যা একটি নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে ভারতের দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরবে।শ্রীলঙ্কা-ভারতীয় আবাসন প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) আওতায়, ভারত সে দেশের সেন্ট্রাল ও উভা প্রদেশের বাগান শ্রমিকদের জন্য প্রায় ৪,০০০ গৃহ নির্মাণ করেছে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের সময়, ভারত প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানিতে সাহায্য করার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন(মার্চ ২০২২)বৃদ্ধি করেছিল।ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে জাফনা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাফনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের মার্চ মাসে এই পরিষেবা কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয় এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য উৎসর্গ করা হয়।নেপাল-জ্বালানি ক্ষেত্রে ভারত ও নেপাল আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি সহযোগিতা জোরদার করেছে। ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা মোতিহারি-আমলেখগঞ্জ পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন (এমএপিএল) দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তঃসীমান্ত পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন হয়ে ওঠে যা বিগত ৬ বছর ধরে নেপালের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা বহন করছে। ২০২৩ সালের জুনে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা (এমওইউ) নেপালে নতুন পেট্রোলিয়াম পরিকাঠামো গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করে। এরমধ্যে রয়েছে শিলিগুড়ি-ঝাপা পাইপলাইন আর চিতওয়ান ও ঝাপায় গড়ে তোলা দুটি গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল। পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত নেপালের পরিবহণ নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জয়নগর-কুর্থা-বারদিবস রেল লিঙ্কটি উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে উদ্বোধন করেছিলেন যা আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রকল্প জোগবানি-বিরাটনগর রেল লিঙ্কের আন্তঃসীমান্ত অংশটি ২০২৩ সালের জুন মাসে মালবাহি রেলের জন্য উদ্বোধন করা হয়েছে। রক্সৌল-কাঠমান্ডু রেল লিঙ্ক প্রকল্পকেও ভারত সাহায্য করছে, যার চূড়ান্ত অবস্থান জরিপ প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ভারত নেপালগঞ্জ, বিরাটনগর এবং বীরগঞ্জে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) গড়ে তুলেছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এই নেপালগঞ্জ আইসিপি উদ্বোধন করেন এবং ভৈরহাওয়া আইসিপি-র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ভয়ানক ভূমিকম্পের পর ভারত সরকার নেপালের ভূমিকম্প পরবর্তী পুনর্গঠন প্রকল্পের জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে আর ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের আওতায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২২-এর এপ্রিলে চালু হওয়া সোলু করিডর ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেপালের বিদ্যুৎ সংযোগ বৃদ্ধি করেছে। একইভাবে ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ মোদী-লেখনাথ ট্রান্সমিশন লাইন, একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প যা বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নত করেছে। এছাড়াও ২০০টি কিডনি ডায়ালিসিস মেশিন এবং ৫০টি রিভার্স অসমোসিস সিস্টেম সরবরাহ করে ভারত নেপালের স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার কাজে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৭০.২ কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মীয়মান আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন যা উভয় দেশের আঞ্চলিক পরিবহন পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক যৌথভাবে উদ্বোধন করা মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি যা উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের আর একটি বড় উদ্যোগ খুলনা-মংলা রেললাইন প্রকল্প, পণ্য পরিবহণ এবং সংযোগ বৃদ্ধি করেছে।জ্বালানী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর তৎকালীন বাংলাদেশী প্রতিপক্ষ কর্তৃক ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন (২৮৫.২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ)-এ উদ্বোধন করা হয়েছিল। ভারত বাংলাদেশকে ১০৯টি বেসিক লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করে জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। আফগানিস্তান-ভারত আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্বোধন করা আফগান-ভরত মৈত্রী বাঁধ (সালমা বাঁধ) সেদেশে সেচ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আফগান গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থনের প্রতীক হিসেবে ভারত আফগানিস্তানের সংসদ ভবন নির্মাণ করেছে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী এটি উদ্বোধন করেছেন। সংকটকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ভারত আফগানিস্তানকে ২,৪৫ লক্ষ মেট্রিকটন গম সরবরাহ করেছে। মায়নমার-মায়নমারে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ের ক্ষেত্রে ভারতের উদ্যোগ সেদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে। ৯৮২.৯৯ কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত কালাদান মাল্টিমডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প এই ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ভারত ইয়াঙ্গনে মায়নমার ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (এমআইআইটি) এবং নে পি তৌ-তে অ্যাডভান্স সেন্টার অফ এগ্রিকালচারার রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (এসিএআরই)-কে সাহায্য করতে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করেছে। মায়নমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সময়, ভারত অপারেশন ব্রহ্ম-র মাধ্যমে ৫০ টনেরও বেশি মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) সামগ্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথম দেশ হিসেবে সাড়া দিয়েছে।ভুটান-ভুটানের সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্ব স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জ্বালানী ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ১৪১ কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত গিয়ালতসুয়েন জেতসুন পেমা ওয়াংচুক মা ও শিশু হাসপাতাল উদ্বোধন করেন যা সেদেশের মানুষকে বিশেষ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ৫০৩৩.৫৬ কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত মাংদেছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ যা ভুটানের পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানী ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সাহায্য করেছে।মালদ্বীপ-মালদ্বীপের পরিকাঠামো, পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে ১০৭.৩৪ কোটি টাকা বিনিয়োগে উদ্বোধন করা জল ও নিকাশী প্রকল্প ৩৪টি দ্বীপে জল ও নিকাশী ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। এই প্রকল্পটি সরাসরি ২৮০০০ মালদ্বীপবাসীকে উপকৃত করেছে, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। ১৬০.২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগে আদ্দু শহর উন্নয়ন প্রকল্প, ২০২৪ সালের অগাস্টে উদ্বোধন করা হয়েছিল যা ভূমি পুনরুদ্ধার এবং সৈকত সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। সমুদ্র থেকে মোট ১৯০ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে যা মালদ্বীপের দীর্ঘতম মানবসৃষ্ট সমুদ্র সৈকত তৈরি করেছিল এবং ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আবাসন বরাদ্দ করতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রকল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল স্থানান্তর অনুশীলনও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরিবেশ সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি সে দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর আদ্দু-র সড়ক যোগাযোগ এবং নিকাশী ব্যবস্থা উন্নত করাও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল।ভারত ৫২.৪২ কোটি টাকা বিনিয়োগে কম্পোজিট ট্রেনিং সেন্টার (সিটিসি) গড়ে তোলার মাধ্যমে মালদ্বীপের নিরাপত্তা এবং প্রশিক্ষণ পরিকাঠামো উন্নত করেছে। তাছাড়া ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডর্নিয়ার বিমান এবং ধ্রুব হেলিকপ্টার প্রদানের মাধ্যমে সেদেশের প্রতিরক্ষা সরবরাহ ও জরুরি পরিস্থিতিতে দেশের দ্রুত প্রতিক্রিয়া ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে। একটি মিলিত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি-২০১৪ সাল থেকে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’, এবং ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ নীতির দ্বারা পরিচালিত ভারত আঞ্চলিক সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তার ভূমিকাকে আরও জোরদার করে তুলেছে। এই প্রকল্পগুলি প্রতিবেশী দেশগুলিতে সদিচ্ছা এবং সমৃদ্ধি ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল এবং আরও সংযুক্ত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement